শ্রাবস্তির জেতবন বিহারে অবস্থানকালে ভদন্ত সারিপুত্র মহাস্থবীর একদিন ভিক্ষুদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন – বন্ধুগণ, পৃথিবীতে চার ধরনের মানুষ বিদ্যমান:
১) যিনি নিজের মধ্যে কলঙ্ক বা দোষ থাকার পরও বুঝতে পারে না যে তার মধ্যে কলঙ্ক আছে।
২) যিনি নিজের মধ্যে যে কলঙ্ক আছে সেটা বুঝতে পারে।
৩) যিনি নিজের মধ্যে কলঙ্ক নেই কিন্তু বুঝতে পারে না যে তার মধ্যে কলঙ্ক নেই।
৪) যিনি নিজের মধ্যে যে কলঙ্ক নেই সেটা বুঝতে পারে।
এই চারজনের মধ্যে প্রথম এবং তৃতীয় জন নিজেদের কলঙ্ক সম্পর্কে যেহেতু অজ্ঞাত, তাদের কাছ থেকে এটা কখনো প্রত্যাশা করা যায় না যে কলঙ্ক মুক্ত হওয়ার জন্য তারা কোনও প্রকার প্রচেষ্টা করবে। কলঙ্কিত ব্যক্তি কলুষিত মন নিয়েই মৃত্যু বরণ করে। অপরপক্ষে দ্বিতীয় এবং চতুর্থ জন নিজেদের কলংক সম্পর্কে যেহেতু সজাগ, তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রত্যাশা করা যায় যে তারা এই কলংক থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য সর্বপ্রকারের প্রচেষ্টা করবে। বিমুক্ত, নিষ্কলুষ এবং পবিত্র মন নিয়েই তারা মৃত্যু বরন করবে।
কলঙ্ক শব্দটির দ্বারা এখানে কি বুঝানো হচ্ছে?
এখান কলঙ্ক শব্দটির দ্বারা বুঝানো হচ্ছে পাপী বা অকুশল মানসিকতা নিয়ে থাকা এবং তত্সাথে অকুশল ও দুঃখ প্রদায়ক কর্ম সম্পাদন করা।
কোনো কোনো ভিক্ষু তাদের এরূপ আশা বা কামনার জন্য কুপিত এবং বিমর্ষ হয়ে থাকে। যেমন, তারা আশা করে তাদের অপরাধ অন্য কেউ না জানুক, কৃত অপরাধ সঙ্ঘের মধ্যে প্রকাশিত না হয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে প্রকাশ হোক। সমপদের কেউ যেন অপরাধের জন্য উপদেশ দেয়। শাস্তা যেন তাদেরকে প্রাধন্য দিয়েই দেশণা দেন। পিণ্ডপাত ভ্রমণে সর্বাগ্রে যেন স্থান হয়। সর্বোত্তম আহারাদি যেন লাভ হয়। তাদের যেন ধর্মদেশণা দেওয়ার সুযোগ হয়। সবাই যেন তাদের সম্মান করে। উত্তম চীবর, আহার, বাসস্থান এবং ঔষধ যেন লাভ হয়। এভাবে তাদের কামনা যদি আশানুরূপ না হয় তাহলে তারা অত্যন্ত কুপিত এবং বিমর্ষ হয়।
অনুরূপ ব্যক্তি তার অকুশল বা পাপ চিন্তা পরিত্যাগ না করে যদিওবা অরণ্যে, সুদূর গ্রামে, পিণ্ডপাত করে, ছিন্ন বা অমার্জিত চীবর পরিধান করে কঠোর সন্যাস জীবন যাপন করে তাঁকে কেউ শ্রদ্ধা বা সম্মান দেখাবে না। একটি অত্যন্ত সুপরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল ও ঝকঝকে বাটিতে একটা মৃত সাপ বা কুকুরের পঁচা মাংস নিয়ে যাওয়ার সময়, একজন ক্ষুদার্ত ব্যাক্তি হয়তো উজ্জ্বল বাটি দেখে আকৃষ্ট হবে ঠিকই কিন্তু যেইমাত্র সে ভেতরের প্রকৃত জিনিস সম্পর্কে জানতে পারবে, ঘৃণায় দুর্গন্ধে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তেমনই অন্তরের অকুশল চিন্তা পরিত্যাগ না করে লোক দেখানো সন্যাস জীবন যাপন করলে কেউ তাকে প্রকৃতপক্ষে শ্রদ্ধা বা সম্মান করবে না।
ভদন্ত সারিপুত্র এরূপ বললে মৌদ্গল্যায়ন থেরও তাঁর একটা অভিজ্ঞতার কথা বলেন এবং জীবিকার জন্য মিথ্যাচার না করে সৎভাবে প্রকৃত সন্যাসজীবন যাপন করবার জন্য জোর দেন। এভাবে এ দুই মহাপুরুষ একজন আরেকজনের সুভাষিত বানীর প্রশংসা করেণ। তাদের এরূপ আলোচনায় উপস্থিত ভিক্ষুগণ পুলকিত হয়ে সাধুবাদের সহিত অনুমোদন করেন।
(মধ্যম নিকায়, অনঙ্গণসূত্র)