এই সুত্রটি বুদ্ধ সারনাথের ঋষিপতন মৃগধাবে উনার পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদেরকে উদ্দেশ্য করেই দিয়েছিলেন। এখানে বুদ্ধ অস্তিত্বের ত্রিলক্ষণ যথাঃ অনিত্য, দুঃখ ও অনাত্মা সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। ধর্মচক্রপ্রবর্তন সুত্র দেশনার পর তিনি দেখলেন যে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের মধ্যে একমাত্র কোণ্ডান্যই বুঝতে পেরেছেন তাঁর দেশনার মর্মার্থ। অন্যেরা তখনো পরিপূর্ণরূপে বুঝে উঠতে পারেনি. তাই তিনি তাদেরকে এই বিশেষ সুত্রটি দেশনা করেন।
এখানে বুদ্ধ বলেন যে পঞ্চস্কন্ধ: রূপ, বেদনা, সঙ্গা, সংস্কার ও বিজ্ঞান যেগুলোর সুবিন্যস্ত সমন্বয়ে ব্যক্তি গঠিত তার সবই অনিত্য, দুঃখপ্রদায়ক ও আত্মাহীন। কেননা রূপ ইত্যাদি যদি আত্মা হত তাহলে সেগুলো দুঃখ প্রদান করত না। নিজের রূপ ইত্যাদি সম্পর্কে সবাই বলতে পারতো যে আমার রূপ, বেদনা, সঙ্গা, সংস্কার ও বিজ্ঞান এরূপ হোক; এরূপ না হোক। রূপ ইত্যাদি যেহেতু আত্মা নয় সেহেতু কেউ তার নিজের রূপ ইত্যাদি সম্পর্কে এরূপ বলতে পারে না।
বুদ্ধ আরো বলেন, যেটা অনিত্য সেটা সুখকর হতে পারে না। কোনো বিষয় যে অনিত্য ও দুঃখ প্রদায়ক সেটির সে অবস্থা থেকেই এটা প্রমানিত হয় যে সে বিষয়টি আত্মাহীন। যদি বিষয়টির কোনখানে বিন্দুমাত্রও আত্মার অস্তিত্ব থাকতো তাহলে সেটা পরিবর্তন হত না। এবং বিষয়ের অপরিবর্তনে দুঃখের উত্পাদন আশাব্যঞ্জক। সুতরাং বুদ্ধ উনার শিষ্যদেরকে উপদেশ দেন যে পরিবর্তনশীল, দুঃখপ্রদায়ক ও আত্মাহীন কোনো বিষয়কে ‘আমি’, ‘আমার’ কিংবা ‘আমার আত্মা’ বলাটা উন্মত্তের বৃথা প্রলাপ ছাড়া আর কিছু না। সেজন্য তিনি সবাইকে আহ্বান জানান রূপ ইত্যাদি পঞ্চস্খন্ধকে সম্যকভাবে জানতে। যাতে করে কেউ উত্পন্ন, অনুত্পন্ন, সুক্ষ্ণ, স্থুল, অতীত, অনাগত সমস্থ প্রকার রূপ ইত্যাদি পঞ্চস্খন্ধকে ‘আমি’, ‘আমার’ কিংবা ‘আমার আত্মা’ বলে না জানে। বরঞ্চ ‘আমি নয়’, ‘আমার নয়’ কিংবা ‘আমার আত্মা নয়’ বলে জানে।
সূত্রটি শ্রবনে পঞ্চবর্গীয় শিষ্যদের সকলেই পঞ্চস্খন্ধ হতে নিবৃত হয়, বীতরাগ হয়, বিমুক্ত হয়, এবং বিমুক্তজ্ঞান লাভ করে তাদের চিত্ত আশ্রব থেকে মুক্ত হয়।
[বিনয় পিটকে মহাবর্গপালি ১ম খন্ড, ১৩ পৃষ্ঠা]