বুদ্ধ তখন শ্রাবস্তির জেতবন বিহারে অবস্থান করছিলেন। যথারীতি একদিন তিনি ভিক্ষুদের আহ্বান করে তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন – ভিক্ষুগণ, তোমরা শীল, প্রাতিমোক্ষ ও প্রাতিমক্ষসংবরনশীলে সুনিয়িন্ত্রিত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে বাস কর। অনুমাত্র দোষেও ভয় জ্ঞান হয়ে শিক্ষাপদ সমূহ পালন করে নিজেদেরকে সুপ্রশিক্ষিত কর। তাহলে একজন ভিক্ষুর তার ভিক্ষু-উচিত আখাংকা সমূহ কোনরূপ বাধা ছাড়াই পরিপূর্ণ হবে।
একজন ভিক্ষুর হয়তো ইচ্ছা হতে পারে – এই পবিত্র সন্যাস জীবনে আমি যেন আমার সহব্রহ্মচারীদের মধ্যে সুপ্রিয়, গণ্য এবং সম্মানিত হই; যেন প্রয়োজনীয় চীবর, বাসস্থান, আহার, ও ঔষধাদি লাভ করতে পারি; আমাকে এই বিষয়সমূহ দান করে দাতাগণ যেন মহাপুণ্যফল লাভ করতে সক্ষম হয়; যেন রতিহীন নিরাসক্ত হয়ে দিনাতিপাত করতে পারি; যেন ভয় বা ত্রাশ আমাকে অভিভুত না করে; যেন ইচ্ছা হলেই কোনও প্রকার কষ্ট বা অসুবিধা ছাড়া ধ্যানের চারি স্থর লাভ করতে সক্ষম হই; যেন সশরীরে শান্ত-সমাহিত বিমোক্ষ সুখ লাভ করতে পারি যেটা রূপ-লোককে অতিক্রম করে; যেন রাগ, দ্বেষ, মোহ এই ত্রিসংযোজন ক্ষয় করে স্রোতাপন্ন হয়ে পতনের সম্ভাবনারহিত হয়ে বিমুক্তিসুখ লাভ করতে পারি; যেন নিম্নগামী (ওরম্ভাগীয়) সংযোজন সমূহ পরিপূর্ণরূপে ক্ষয় করে ঔপপাতিক প্রাণী হয়ে জন্মগ্রহণ করি এবং সেখান থেকেই নির্বাণ লাভ করতে সক্ষম হই; যেন নানারকম অলৌকিক ঋদ্ধি যেমন: দেয়াল ভেদ করে কিংবা পানির উপর গমনাগমন করা, দিব্যশ্রুতি (দূরের এবং কাছের, দৈব এবং পার্থিব সকল শব্দ শুনতে পারা), পরচিত্ত ও চিত্তের প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে পারা, নিজের বা অপরের পূর্বজন্মসমূহ স্মরণ করতে পারা, সত্ত্বগণের চ্যুতি ও উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে পারা, ইত্যাদি ক্ষমতার অধিকারী হতে পারি; এবং যেন ইহজন্মেই স্বয়ং চিত্তবিমুক্তি ও প্রজ্ঞাবিমুক্তি উপলব্ধি করতে পারি। কোনো ভিক্ষুর চিত্তে যদি এরূপ আকাঙ্ক্ষার সৃষ্ঠি হয়ে থাকে তাহলে বুদ্ধের উপদেশ হল: – “ভিক্ষুগণ, শীলে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে অবস্থান কর। চিত্ত সংবরন করে প্রশান্ত চিত্তে সমাধিস্থ হও, ধ্যানে অবহেলা না করে বিদর্শণ ভাবনায় রত হও, এবং শুন্যাগারে বাস কর। এভাবে তোমাদের সমস্থ আখাংকা পরিপূর্ণ হতে পারে। ভিক্ষুগণ বুদ্ধের এরূপ দেশনা শুনে আনন্দিত হন এবং সাধুবাদের সহিত তা অনুমোদন করেন।
(মজ্ঝিমনিকায়, মূলপন্নাস, মূলপরিয়ায়বজ্ঞ, আকাংখ্যেয়সুত্ত)