দ্বিবিধবিতর্কসুত্র: দুই প্রকারের চিন্তা

এই বিশেষ সুত্রটি বুদ্ধ শ্রাবস্তিতে জেতবনের অনাথপিন্ডিক আরামে অবস্থানকালে দেশনা করেন। এখানে বুদ্ধ উনার শিষ্যদেরকে দুই প্রকারের চিত্ত-বিতর্ক বা চিন্তা সম্পর্কে শিক্ষা দেন। তিনি বলেন, ভিক্ষুগণ আমার বুদ্ধ হওয়ার পূর্বে যখন আমি বোধিসত্ব অবস্থায় পারমি পূরণ করছিলাম, আমার মনে এই দুই প্রকারের চিন্তার উদ্রেক হয়। তা হল:

১) কাম-চিন্তা, দ্বেষ-চিন্তা ও হিংসা-চিন্তা;

২) নৈস্ক্রম্য-চিন্তা, দ্বেষহীন-চিন্তা, ও মৈত্রী বা অহিংসা-চিন্তা।

এই সুত্রে বুদ্ধ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। প্রথমত তিনি বলেন যে, কোনো ভিক্ষু যখন তার দৈনন্দিন কর্ম ভাবনানুশীলনে রত হন তার মনে কোনো না কোনো প্রকার চিন্তার উদ্রেক হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে, তারা এতই মোহপরায়ন ও বিপথগামী যে তারা বুঝতে পারে না কোন ধরনের চিন্তা তাদের মনে সৃষ্টি হচ্ছে বা হয়েছে। কিন্তু একজন ধ্যানপরায়ন ভিক্ষু সহজেই বুঝতে পারে যে তার মনে হয়তো উপরোল্লিখিত প্রথম প্রকার কিংবা দ্বিতীয় প্রকারের চিন্তার উত্পন্ন হয়েছে। যদি তার মনে প্রথম প্রকারের চিন্তা অর্থাৎ কাম-চিন্তা ইত্যাদি উত্পন্ন হয় এবং সে যদি তা সম্যকরূপে বুঝতে পারে যে তার সে চিন্তা নিজের, অন্যের কিংবা উভয়ের জন্য অহিতকামী তাহলে সে চিন্তা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, কোনো চিত্ত কখনো চিন্তা মুক্ত থাকে না। সুতরাং অকুশল চিন্তা যখন বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছে সে মনে কুশল চিন্তা যথাঃ নৈস্ক্রম্য-চিন্তা ইত্যাদির সৃষ্টি হবেই। তখন একইভাবে সে ভিক্ষু বুঝতে পারে যে তার এ চিন্তা নিজের, অন্যের এবং উভয়ের জন্য হিতকামী ও মঙ্গলময়। সে যখন এরূপ চিন্তা করে তার চিত্তে উত্পন্ন কুশল চিন্তার স্থায়ী ও বৃদ্ধি সাধন হয়। কিন্তু বুদ্ধ বলেন এভাবে এমনকি কুশল চিন্তা নিয়েও দীর্ঘক্ষণ চিন্তা করা উচিত নয়। কেননা এতে করে অনুশীলনকারী ভিক্ষু শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে এবং তা তার সাধনার অগ্রসরতায় বাঁধা সৃষ্টি করে। ভিক্ষু জীবনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সাধনার অনুশীলন ও আধ্যাত্মিকতায় উন্নতি সাধন করা। সেজন্য বুদ্ধ সবসময় মধ্যম পথের অনুশীলনের কথা বলে থাকেন। এক্ষেত্রেও বুদ্ধ বলেন অকুশল চিন্তা পরিত্যাগ করে কুশল চিন্তার সৃষ্টি ও তার সুখকর বিপাকের কথা ভাবা এবং আবার সেবিষয়ে অতিরিক্ত চিন্তা না করে নিজের ভাবনানুশীলনে নিমগ্ন হওয়া হচ্ছে মধ্যম পথের অনুশীলন।

বুদ্ধ আরো বলেন মানুষ যেবিষয়ে সর্বদা চিন্তা করে সেটা তার কাছে অভ্যাস কিংবা সংস্কারে পরিনত হয়। এবং সেটা যদি খারাপ অভ্যাস হয় তাহলে তার সে অভ্যাস তার এবং তার চারপাশে অনেকের জীবনে অসামান্য দুঃখ বয়ে আনে। তিনি উক্ত সুত্রে দু’টি চমত্কার উদাহারনের মাধ্যমে খুবই পরিষ্কার করে বুঝিয়েছেন কিভাবে খারাপ চিন্তাসমূহকে পাহারা দেওয়া উচিত অন্যতায় তা কিরূপ ক্ষতি সাধন করতে পারে এবং কিভাবে ভাল চিন্তাসমূহকে খুবই নিশ্চিন্তে মনরুপ মাঠে বিচরণ করতে দেওয়া উচিত।

পরিশেষে বুদ্ধ উনার শিষ্যদেরকে আহ্বান করেন: হে ভিক্ষুগণ, আমার যা করার ছিল তোমাদের জন্য তা আমি করেছি, ভিক্ষুগণ, দেখ এই হচ্ছে বৃক্ষমূল, এই হচ্ছে শুন্যগৃহ; এখন তোমরা সেখানে বসে মনোযোগের সহিত ভাবনানুশীলন কর, দেরি কর না, অন্যতায় পরে অনুশোচনা করতে হবে।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s