বত্থূপম সুত্র: কায়বিশুদ্ধি নয়, চিত্তবিশুদ্ধিই সকলের কাম্য হওয়া উচিত

তথাগত বুদ্ধ এই বিশেষ সুত্রটি শ্রাবস্থির জেতবনারামে অবস্থারত ভিক্ষুদিগকে উদ্দেশ্য করেই করেছিলেন।

একটি অপরিচ্ছন্ন নোংরা কাপড় যেকোনো রঙের পানিতে ভিজিয়ে তোল না কেন সেটাকে অপরিস্কার এবং নোংরা দেখাবে। অনুরূপভাবে একটি অপরিচ্ছন্ন কলুষিত মন থেকে একমাত্র দুঃখময় গতিই প্রত্যাশা করা যায়। একটি পরিস্কার উজ্জ্বল কাপড় যদি রং করা হয় সেটাকে খুবই পরিস্কার এবং সুরঞ্জিত দেখাবে। অনুরূপভাবে একটি পবিত্র নিষ্কলুষ মনের গতি সর্বদা সুখময় হবে প্রত্যাশা করা যায়।

অপরিস্কার বা কলুষিত মনের হেতু বা কারণ হচ্ছে – অবিদ্যা, লোভ, হিংসা, ক্রোধ, অজ্ঞানতা, প্রতিহিংসাপরায়নতা, বিদ্বেষভাব, অন্যের ক্ষতি কামনা, ঈর্ষা, মাৎসর্য্য বা ধনলিপ্সা, মায়া, শঠতা, ধৃষ্টতা, দম্ভ, অহমিকা, প্রমাদ বা শ্রমবিমুখতা ইত্যাদি।

একজন ভিক্ষু যিনি আধ্যাত্বিক উন্নতি প্রত্যাশা করেন এবং পরম শান্তি নির্বাণ কামনা করেন তিনি উপরোল্লিখিত কারণসমূহ যে চিত্তের অকুশল অবস্থা সেটা জেনে খুব দ্রুতই সেগুলো পরিত্যাগ করে। বুদ্ধের, ধর্মের ও সঙ্ঘের গুণাবলী স্মরনের মাধ্যমে অন্তরে অঢেল শ্রদ্ধা ও ভক্তি উৎপাদন করে। উক্ত ত্রিরত্নের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধাপ্রবণ হয়ে অন্তরে প্রীতিলাভ করে। ধর্মের অর্থ জ্ঞাত হয়ে প্রেরণা লাভ করে, ধর্মজ্ঞান লাভ করে, এবং ধর্মে প্রমোদ লাভ করে। এর ফলে তাঁর মনে প্রীতির উদয় হয়, শরীরে প্রশান্তি বিরাজ করে, প্রশান্ত কায়ে সে সুখ অনুভব করে, সুখী হয়ে তাঁর চিত্ত সমাধিস্থ হয়।

এরূপ শীলবান, সমাধিপরায়ন ও প্রজ্ঞাসবান ভিক্ষু যদি বিবিধ স্যুপ ও ব্যাঞ্জনযুক্ত উত্তম আহার বা পিন্ড ভোজন করে তাঁর অন্তরায় হবে না। একটি অপরিচ্ছন্ন নোংরা কাপড় যেমন পরিস্কার জলে ধোবন করলে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, একইভাবে একজন ভিক্ষু তাঁর শীল, সমাধি ও প্রজ্ঞার গুনে কায়িক, বাচনিক ও মানসিক ভাবে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। সে মৈত্রী, করুণা, মুদিতা ও উপেক্ষা সহগত চিত্ত হয়ে দম্ভ, বৈরী ও প্রতিহিংসা বর্জিত হয়ে বাস করে।

সে বুঝতে পারে যে নীচ, হেয় কিংবা উচু সংজ্ঞাসমূহের অতিক্রমের পথ রয়েছে। এভাবে জানবার এবং দেখবার ফলে তার মন কাম-আসব, ভব-আসব ও অবিদ্যাসব থেকে বিমুক্ত হয়। বিমুক্ত হয়ে তাঁর বিমুক্ত-জ্ঞান উৎপন্ন হয়, জন্ম পরিগ্রহ ক্ষীণ হয়, ব্রহ্মচর্য্য বাস করা হয়, কর্তব্যকর্ম সম্পন্ন হয়। এইটাই হচ্ছে চিত্ত-বিমুক্তি।

দেশনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরিকা ভারদ্বাজ নামে একজন ব্রাহ্মণ। সে জানতে চায় ভগবান গৌতম বাহুকা নদীতে স্নান করতে যান কি না। কারণ ভারদ্বাজের শাস্ত্র অনুসারে বাহুকা নদীতে স্নান করে পরিশুদ্ধি লাভ করা যায়। এর প্রত্যুত্তরে বুদ্ধ কিছু গাথা আবৃত্তি করলেন। তাঁর সারমর্ম হল বিভিন্ন নদীতে স্নান করে পরিশুদ্ধি লাভ কামনার চেয়েও মনের মধ্যে সদ্গুণাবলী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কায়িক, বাচনিক ও মানসিকভাবে পবিত্র হওয়াটাই উত্তম স্নান। এই দেশণা শুনে সুন্দরিকা ভারদ্বাজ অত্যন্ত প্রীত হয় এবং বুদ্ধের নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s