বুদ্ধ ধর্মের অধ্যয়ন ও অনুশীলন

ভদন্ত লামা থুবতেন য়েশে

বাংলানুবাদ: ভিক্ষু জ্ঞানবোধি

[প্রয়াত লামা থুবতেন য়েশে ছিলেন তিব্বতের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সফল বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুদের মধ্যে একজন যাঁর শিক্ষায় উপকৃত হয়েছেন শত সহস্র মানুষ. তিনি International Foundation for the Preservation of the Mahayana Tradition – এর প্রতিষ্ঠাতা]

বুদ্ধ ধর্ম অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা আসলে আমাদের নিজেদেরকেই অধ্যয়ন করি, নিজেদের চিত্তের প্রকৃতি সম্পর্কে শিখি. এখানে আধ্যাত্বিক কোনো কিছুর চাইতেও জোরটা বেশি দেয়া হচ্ছে ব্যবহারিক বিষয়ের উপর. যেমন: কিভাবে দৈনন্দিন জীবন যাপন করা যায়, এবং কিভাবে দৈনন্দিন জীবনের সাথে অন্তরের সমন্বয় রক্ষা করা যায় যাতে করে ম সুখ ও শান্তিপূর্ণ থাকে. অন্যকথায় জোরটি নিরীক্ষিত জ্ঞান-প্রজ্ঞার উপর, কোনো অন্ধবিশ্বাসের উপর নয়. পাশ্চাত্য ভাষায় বলতে গেলে বুদ্ধ ধর্মকে প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বলা যায় না, বরঞ্চ একটি দর্শন, বিজ্ঞান অথবা মনস্তত্ত্ব বলা যায়.

মানুষের মনের জন্মজাত স্বভাবই হচ্ছে সুখের অন্বেষণ করা; এই দৃষ্টিকোণ থেকে পূর্ব কিংবা পশ্চিমা মানুষদের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য নেই. কিন্তু তোমার জীবন প্রণালী যদি ভোগের পৃথিবীর দিকে বেশি ঝুকে পরে এবং তুমি যদি সেঠাকে আবেগপ্রবণ হয়ে জড়িয়ে রাখ – তাহলে সেঠা খুবই ভয়ানক – অর্থাৎ তোমার মধ্যে কোনো সংযমতা নেই. এই  সংযমতা কোনো পূর্বদেশীয় সংস্কৃতি কিংবা বৌদ্ধিক শিক্ষা নয়; এটা এমন একটা জিনিস যেটা আমাদের সবার প্রয়োজন. বিশেষ করে যাঁরা পার্থিব জীবন যাপন করে এবং মনস্থাত্বিক ভাবে বিষয়-আসয়ের প্রতি আসক্ত. বুদ্ধ দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে সেরকম মন – মানসিকতা হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর এবং অসুস্থ. আপনারা জানেন যে বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক ও প্রাযুক্তিক উন্নতি একা আপনার এই অদম্য আখাংকা ও আসক্তিকে সন্তষ্টি করতে পারে না, পারবে না আপনার আবেগপ্রসূত সমস্যার সমাদান করতে.

এভাবে বুদ্ধের শিক্ষার উদ্দেশ্যই হচ্ছে – মানুষের মনের প্রকৃতিকে বোঝা; তার অপরিসীম সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করা এবং কিভাবে সেই সন্ভাবনার অগ্রগতি সম্ভব তার উপস্থাপন করা. যাইহোক, বুদ্ধের এই শিক্ষা প্রণালী অধিবিদ্যার প্রক্রিয়ার প্রতি মানুসের অন্ধ বিশ্বাসের চাইতেও এর সম্যক উপলব্ধিকে প্রাধান্য দেয়. যাইহোক, আপনি ধর্মপ্রাণ হোন কিংবা অধর্মপ্রান হোন, আস্তিক হোন কিংবা নাস্থিক হোন – আপনার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার মনের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া. কেননা যদি সেবষয়ে আপনি অবগত না হন – তাহলে সহজেই আপনি ভাবতে থাকবেন যে – আপনি খুবই সাস্থ্যবান এবং আপনার দৈনন্দিন জীবন ভালই চলছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে খারাপ বা অকুশল চেতনার ভিত আপনার মনের মধ্যে ক্রমশ গাড় ও গভীর হচ্ছে. আপনার মধ্যে মানসিক অসুস্থতার এই মৌলিক হেতু – অবস্থার সামান্য পরিবর্তনে আপনাকে করে তুলতে পারে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন. যতদিন পর্যন্ত আপনি অসক্তিগ্রস্থ হয়ে নিজের মনের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে ভোগের পৃথিবীতে ডুবে থাকেন, ততদিন – এটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে.

“আমি এইসব বিশ্বাস করি না” – বলে আপনি এই সম্ভাবনাকে অস্বীকার করতে পারেন না. যেরূপ আপনি বলতে পারেন না যে “আমি বিশ্বাস করি না যে আমার একটা নাক আছে”. আপনি বিশ্বাস করুন বা নাই করুন আপনার নাক রয়েছে.

পশ্চিমা দেশীয় অনেক লোকই বলে থাকেন, “আমি কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করি না”; এরূপ নাস্তিক সেজে তারা খুবই গর্ব অনুভব করে. গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন – আসলেই আপনি কিছুতে বিশ্বাস করেন নাকি না করেন – এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ. পাশ্চাত্যে অনেক মতপার্তক্য রয়েছে: যেমন- বিজ্ঞানীগণ ভাবেন যে তারা নাস্তিক (non-believers), ধর্মীয় লোকজন ভাবেন যে তারা আস্তিক. যাইহোক – আপনি আস্তিক হোন কিংবা নাস্তিক হোন আপনার মনের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা প্রয়োজন.

আপনি সবসময় আসক্তির কথা বলেন, কিন্তু কিভাবে তা সংযম করা যায় তা জানেন না. কোথায় বলা সহজ, কিন্তু আসক্তির প্রকৃতি বোঝা খুবই কঠিন কাজ. একটি সাধারণ উদাহারন দেয়া যাক – কার এবং এরোপ্লেন-এর সৃষ্ঠি হয়েছে মানুষ যাতে দ্রুত কর্ম সম্পাদন করে কিছু বেশি সময় আনন্দ উপভোগ করতে পারে; কিন্তু একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায় মানুষের মন আগের চাইতেও বেশি উত্কন্ঠিত ও অশান্ত হয়েছে. আমি কাউকে অভিযোগ করছি না বরং আপনারা  নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের পর্যবেক্ষণেই বুঝতে পারবেন. আমি যা বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে – যদি সারাদেশ ভোগের পৃথিবীতে আসক্ত হয়ে পড়ে, মনের প্রকৃত অবস্থা বোঝার আর কোনো সুযোগ থাকেনা. আমি সেধরনের জীবন প্রণালীকে কঠিন জীবন বলি. এমতাবস্থায় আনন্দ উপভোগ ও সন্তোষ উপলব্ধি প্রকৃতি দুঃসাধ্য, কেননা প্রকৃত আনন্দের অনুভুতি নিতান্তই অন্তরের সৃষ্ট, বাহ্যিক বিষয়-বস্তুর নয়.

আধুনিক intelligently sceptical যুবকেরা জীবনে কোন বিষয়ের গুরুত্ব কতটুকু তা বোঝে, এবং জানে যে আনন্দের বা সুখের অনুভুতি বাহ্যিক বিষয়বস্তুজাত নয়, বৌদ্ধ ধর্মের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় – সাংসারিক বিষয়বস্তু সুখ প্রদান করতে পারে না. এভাবে তারা যে বিষয়টি তাদের সন্তোষ প্রদানে সমর্থ এমন কিছু খোঁজছে. তথাগত বুদ্ধ যখন দুঃখের কথা বলেছিলেন, তখন তিনি প্রাথমিকভাবে শারীরিক ব্যাধি কিংবা ব্যথা – বেদনাকে বোঝাননি, তিনি জীবনের অসন্তোষ অবস্থাকেই বুঝিয়েছেন. অসন্তোষই হচ্ছে প্রকৃত দুঃখ. আপনি যতই আপনার আখাংকার পরিতৃপ্তি সাধন করেন না কেন, আখাংকা বেড়েই চলে. সেঠাই হচ্ছে দুঃখ, মহময়তার আবেশ (deluded frustration).

বৌদ্ধ মনস্তত্ব ছয় প্রকারের প্রাথমিক delusion -এর কথা বলে থাকে যেগুলো মানুষের মনের শান্তি নষ্ট করে এবং অযথা অশান্ত ও উদ্বিগ্ন করে তোলে – সেগুলো হল – আসক্তি, ক্রোধ, অজ্ঞতা, অহংকার, deluded সন্দেহ এবং মিথ্যাদৃষ্টি. এগুলো হচ্ছে মানসিক ধর্ম, বাহ্যিক নয়. সুতরাং প্রভু বুদ্ধ যখন কিভাবে এসব মোহ অতিক্রম করা যায় তা লোকজনকে শিখিয়েছিলেন, তিনি তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে বোঝার প্রয়োজনীয়তাকে গুরত্ব দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসকে নয়. নিজের মনের গভীর পর্যালোচনা এবং introspective জ্ঞান-প্রজ্ঞার উন্নতি ছাড়া এধরনের জ্ঞানের উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়. এমনকি যদিও আমরা মোহ সম্পর্কে অনেক কথায় বলি আমরা প্রকৃতপক্ষে কিছুই জানি না. এসব মৌলিক মোহসমূহ আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে সৃষ্ঠ এবং সেগুলো মনকে সর্বদা শান্ত করে রকে. মুক্ত হতে হলে আপনার অধিকারের বিষয় বস্তুর ত্যাগের প্রয়োজন নেই. আপনার অধিকারের বিষয়-আসয় আপনার নিকটই থাকবে, কিন্তু সেগুলোর প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করা মানে আপনার জীবনকে উদ্বিগ্ন এবং কঠিন করে ফেলা; আপনার মন হবে অস্পষ্ট এবং দুষিত. অপরিশুদ্ধ মন স্বাভাবিক ভাবেই অজ্ঞ এবং চঞ্চল, সেরকম মনে প্রজ্ঞার আলো কখনো জ্বলে না. এরকম সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে ভাবনার অনুশীলন.

ভাবনানুশীলন মানে কিছু না করে শুধু গৃহকোণে বসে থাকা নয়, মনের একাগ্রতা সৃষ্টির চেষ্টা করা. এটা নিষ্ক্রিয়তা থেকে মুক্তি এক ধরনের প্রজ্ঞা যার কাজ হচ্ছে মনকে জাগ্রত রাখা. আপনার প্রাত্যাহিক জীবনের প্রত্যেকটি কাজের প্রতি আপনাকে সচেতন হতে হবে, জানতে হবে কেন এবং কিভাবে আপনি কাজটি করছেন. সাধারনত আমরা আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনে প্রায় সবকিছুই করি – অচেতনভাবে যন্ত্রের ন্যায়: আমরা খাই, পান করি, কথা বলি অসচেতনভাবে. আমাদের মনে যে কি ঘটে যাচ্ছে সে বিসয়ে আমাদের কোনো ধারনাই নেই, যদিও আমরা বলি যে আমরা সচেতন. আমি আপনাকে বিচার করছি না অথবা হেয় করছি না, আপনি নিজেই লক্ষ্য করুন তাহলেই বুঝবেন. বুদ্ধধর্মের পদ্ধতিই হচ্ছে – আপনার সামনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কিছু বিসয় তুলে ধরা. আমি তেমন গভীর কিছু বলছি না. এটা খুবই সাধারণ.

আপনি যদি আপনার আসক্তি ও আসক্তির বিষয়ের প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত না হন, তাহলে আপনার বুন্ধু-বান্ধব, মাতা-পিতা কিংবা আপনার দেশের জন্য মৈত্রী সৃষ্টি করা আপনার জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে. যেহেতু আপনি অসচেতন, অজ্ঞানবশতঃ আপনি আপনার প্রিয়জনদের দুঃখ দিয়ে থাকেন. অনুরূপভাবে কোনো ব্যক্তি যখন রাগান্বিত হন, তিনি তখন নিজেকে সম্পূর্ণ ভুলে যায়. এবং তার মনের মধ্যে তখন কি হতে থাকে সে তার কিছুই বুঝে না. তখন মানুষের অবস্থা যে কিরকম হয় তা আপনারা হয়ত উপলব্ধি করতে পারেন. এগুলো হচ্ছে – আমরা অসচেতনভাবে যা কিছু করি তার কয়েকটি নমুনা. প্রায় সময় আমরা অসচেতনতার সহিত কাজ করে অন্যকে আঘাত দিয়ে থাকি. নিজেদের আচার-আচরণ, মানসিক-অবস্থা সম্পর্কে অবগত না হয়ে নিজের ও অন্যের ক্ষতি সাধন করে থাকি.

পশ্চিমা দেশে মনস্তত্বের উপর শিক্ষা করেছেন এমন অনেক মানুষ রয়েছেন. কিন্তু বুদ্ধের মতে – আমাদের সবার মনস্তাত্বিক হওয়া প্রয়োজন, অন্যের চিকিত্সার জন্য নয় – বরঞ্চ নিজের মনকে জানার জন্য. ভগবান বুদ্ধ বলেন – আমাদের সবার মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় শক্তি রয়েছে – আমাদের মনকে উপলব্ধি করার এবং সেই সাথে নিয়ন্ত্রণ করার. আপনি যেই মাত্র – আপনার মনকে বুঝতে সক্ষম হবেন, ঠিক তখন হতে – স্বাবাভিক ভাবেই আপনার মন নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে. কখনো মনে করোনা যে মনের প্রকৃতি জানার ব্যাপারটি হিমালয়ের পর্বতে অবস্থিত সাধকের কাজ, কিংবা কোনরূপ পার্থিব বিষয়-আসয় যাদের নেই – তাদের কাজ. যখনি আবেগপ্রবণ হবে, অনুভুতি নিয়ন্ত্র হারাবে – সমিত হও এবং শুধু নিজের মনকে পর্যবেক্ষণ কর, তুমি কি করছ সে বিষয়ে সজাগ হও. নিজেকে জিজ্ঞাসা কর – ‘আমি কি করছি’ – নিজেকে এভাবে বিশ্লেষণ করার ব্যাপারটি সত্যিই চমত্কার. এভাবে নিজেকে বোঝার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার সমস্যা সমাধান করতে পারেন. আমাদের সমস্যা হচ্ছে – আমাদের গভীর – জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, সচেতনতা কিংবা বিজ্ঞানের অভাব.

অতএব, অন্যকে মৈত্রী প্রদর্শনের পূর্বে আপনাকে তার প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে হবে. যদি না জানেন, তাহলে আপনার আরো একটি ঔদ্বত্য ও স্বাতন্ত্রবোধ ফ্যাসাদে পরার সম্ভাবনা রয়েছে. আমরা সাধারত আবেগপ্রবণ হয়ে বলে থাকি – “আমি কোনো ছেলেকে বা মেয়েকে ভালবাসি” – এটা এত সহজ নয়. সুতরাং এটা খুবই প্রয়োজন যে আপনি নিজেই নিজের মনস্তাত্বিক হোন. তাহলে নিজের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে সুন্দরভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে পারবেন, অর্জিত পার্থিব সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে পারবেন এবং হঠাত চঞ্চল, উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত না হয়ে স্থির ও শান্তভাবে জীবনের সকল সমস্যার মোকাবেলা করতে পারবেন.

মনস্তাত্বিক হওয়ার জন্য আপনার বড় কোনো দর্শন শিক্ষা করার প্রয়োজন নেই. এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো শুধু প্রতিদিন নিজের মনের প্রকৃতি জানার বা বোঝার চেষ্টা করা. আপনি যদি প্রতিদিন পার্থিব বিষয়-অসয়ের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, যেমন আপনার রান্না ঘরের খাদ্য ইত্যাদি, তাহলে নিজের মনকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন না কেন. এটাতো সবচেয়ে বেশি গুরত্বপূর্ণ একটি বিষয়. পশ্চিমাদেশীয় মানুষের মন-মানসিকতা হচ্ছে – “আমার সকল সমস্যার সমাধান – আমি বাইরে সুপারমার্কেট থেকে কিনতে পারি.” আপনি কি মনে করেন যখনি আপনি অস্বস্থি অনুভব করবেন, হতাশ হবেন – বাইরের ফার্মেসি থেকে কয়েকটি বড়ি কিনে এনে খাবেন আর আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল. আপনি কি মনে করেন ঐ ধরনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সত্যিই ফলপ্রসূ? অবশ্যই নয়. যদিও প্রাথমিক ভাবে মনে হয় তা খুবই উপকারী, প্রকৃতপক্ষে অতীব সাময়িক. সেঠাতো আপনার বিভ্রান্ত আবেগের উপসর্গ পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে না, বরঞ্চ আপনাকে আরো নিস্ক্রিয় এবং নির্বোধ করে ফেলে.

আপনার বস্তুবাধী মন ভাবেন যে – সুখ ও শান্তি কেনা যেতে পারে, কিন্তু তা সম্ভব নয়. এই চিন্তার গভীরে যে বিসয়টি কাজ করে তা হল – আপনি সুপারমার্কেটে একটি শান্তিপূর্ণ মন কিনতে পারবেন, তা হচ্ছে মানুষের একটি বড় ভুল. ধর্মীয় মানুষদেরও উচিত কোনকিছুই তাদের অন্ধভাবে বিশ্বাস না করে তাদের নিজেদের মনকে বোঝার চেষ্টা করা. এই বিসয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কেননা – বিশ্বাস একাই সমস্যার সমাধান করতে পারে না, জ্ঞান-প্রজ্ঞার উপলব্ধির মাধ্যমেই তা সম্ভব. ভগবান বুদ্ধ এমন কি বলেছেন যে, “শুধু বুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা ভয়ানক হতে পারে – যদি সে নিজের মনের প্রকৃতি সম্পর্কে না বোঝে. আপনি যখন আপনার নিজের অন্তরের অন্তরস্থল হতে কোনো কিছু আবিস্কার করবেন,  তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করতে কোনো আপত্তি নেই. আধ্যাত্বিক সাধনা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিজাত বিশ্বাস সম্পূর্ণরূপে গ্রহনীয়. কিন্তু আপনি যদি নিজেই জানেন না কেন আপনি কোনো কিছুতে আদৌ বিশ্বাস করছেন, তাহলে আপনার সে বিশ্বাস সহজেই নষ্ট হতে পারে. অধ্যাত্বিকতায় প্রবৃত্ব অনেক মানুষই দুর্বল কেননা তারা তাদের নিজেদের মনের প্রকৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ. নিজের মনের মানসিক শক্তিকে বোঝার মাধ্যমে – একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান থাকেন.

আপনি যখন নজের মনের ছবি ও বিমূর্ত কল্পনাকে বুঝতে সক্ষম হবেন, তখন আপনি নিজেই জানতে পারবেন যে – বাহ্যিক ইন্দ্রিযলোকের প্রতি আসক্তি – মনের কল্পনাপ্রসূত বৈ কিছু নয়. সেখানে কোনো সত্যতা নেই. আমরা নিজেদের মনের প্রকৃতি না বোঝার কারণে বারম্বার প্রবঞ্চিত হচ্ছি. আমরা অসচেতনভাবে আশ্চর্য্যরকম সচেতন – সেটা নিতান্তই মোহগ্রস্থ মনের সৃষ্ট. এবং আপনাকে অবশ্যই শিকার করতে হবে যে – এরকম মন হচ্ছে অসাস্থ্যকর.

প্রাত্যাহিক জীবনের প্রতিটি কর্মে সচেতন থাকা – তাই আমাদের নিতান্তই উচিত. প্রজ্ঞা এবং সচেতনতার প্রকৃতি হচ্ছে প্রশান্তি ও আনন্দ দেয়া. এই সুখ ও শান্তি হচ্ছে মহৎ ও বিশাল. এর জন্য কোনো পার্থিব বিষয়-আসয়ের প্রতি আসক্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই – আপনাকে শুধু সম্যক জ্ঞানের দ্বারা কাজ করে যেতে হবে. এভাবে শান্তি স্বাবাভিক নিমেই সৃষ্ট হয়. আপনাকে এই ভেবে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই যে – আমি যদি এভাবে আমার জীবন যাপন করে – পরবর্তী জীবনে আমি সুখী হব. এমনকি কোনো আধ্যাত্বিক অবস্থানে পৌঁছার জন্যও আপনাকে আবিষ্ট হতে হবে না. আপনি যদি শুধুমাত্র সম্যক মার্গ অনুশীলনে চলেন – সমস্ত-সুখ-শান্তি-আধ্যাত্বিক-উন্নতি-সাধন স্বাভাবিকভাবে আপনারই হবে. এভাবে আপনি হতে পারেন পরম সুখ ও শান্তির অধিকারী.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s