বুদ্ধ তখন শ্রাবস্থির জেতবনে অনাথপিন্ডিকের আরামে অবস্থান করছিলেন। সারিপুত্র ভান্তেও ছিলেন সাথে। দূর-দুরান্ত থেকে অনেক ভিক্ষু এসেছে বুদ্ধকে দর্শন করতে এবং উনার মূখ থেকে কিছু ধর্মবাণী শুনতে। সম্বভতঃ উনি আজ কিছুটা ক্লান্ত। তাই সারিপুত্র ভান্তেকে বললেন শিষ্যরা কি চায় দেখতে। শিষ্যরা সারিপুত্র ভান্তেকে দেখে অবাক ও মুগ্ধ হলেন। এতবড় জ্ঞানী ভিক্ষু, স্বয়ং বুদ্ধ কতৃক প্রশংসিত এমন ভিক্ষুর সহজে দেখা মেলে না। প্রাথমিক সম্ভাষণ শেষে সারিপুত্র ভান্তে তাদেরকে বললেন: ভিক্ষুগণ, সবাই ‘সম্যকদৃষ্টি’, ‘সম্যকদৃষ্টি’ বলে থাকে। তোমরা কি জান ‘সম্যকদৃষ্টি’ আসলে কি? ভিক্ষুগণ বললেন, ভান্তে, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি বুদ্ধ কিংবা আপনার মতো পণ্ডিত মহাথেরর কাছ থেকে কিছু ধর্মভাষণ শুনতে। অনুগ্রহ করে আপনি আমাদেরকে বুঝিয়ে বলুন ‘সম্যকদৃষ্টি’ আসলে কি? সারিপুত্র ভান্তে বললেন, ঠিক আছে তাহলে আমি বলছি, তোমরা মনোযোগের সাথে শোন।
কোন ভিক্ষু যখন প্রাণীহত্যা, মিথ্যা-পরুষ-পিশুন-সম্প্রলাপ বাক্য ভাষণ, ব্যভিচার, চুরি, লোভাতুর কর্ম, হিংসা ও মিথ্যাদৃষ্টি ইত্যাদি অকুশল কর্ম ও এদের মূল যেমন: লোভ, দ্বেষ, মোহ এবং উপরোক্ত কর্মসমূহ থেকে বিরত থাকা ও নির্লোভ, দ্বেষহীন, সম্যকদৃষ্টি প্রতিপন্ন হওয়ার মত কুশল কর্ম ও এদের মূল যেমন অলোভ, অদ্বেষ, অমোহ সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
সারিপুত্র ভান্তের এরূপ বর্ণনা শুনে ভিক্ষুগণ অভিভূত হন এবং জানতে চান অন্যভাবে বর্ণনা করা যায় কিনা. সারিপুত্র ভান্তে বললেন তোমরা শোন আমি এক এক করে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করছি।
কোন ভিক্ষু যখন চার প্রকারের আহার যথা: কবলিকৃত আহার, স্পর্শ আহার, মনোসনচেতনা আহার ও বিজ্ঞান আহার, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন চতুরার্য্যসত্য যথা: দুঃখ, দুঃখের কারণ, দুঃখের নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন জরা ও মৃত্যু, এদের কারণ, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন জন্ম, জন্মের কারণ, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ভব, ভবের কারণ, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন চারি উপাদান যথা: কামুপাদান, দৃষ্টি-উপাদান, শীল-ব্রত উপাদান ও আত্মাবাদ উপাদান, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ছয় প্রকারের তৃষ্ণা যথা: রূপ, শব্দ, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ ও চিন্তা, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ছয় প্রকারের বেদনা যথা: চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ছয় প্রকারের স্পর্শ যথা: চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ষড়াযতন যথা: চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন নাম ও রূপ, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন ছয় প্রকারের বিজ্ঞান যথা: চক্ষু, কর্ন, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ও মন, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন তিন প্রকারের সংস্কার যথা: কায়, বাক্য ও মন-সংস্কার, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন চতুরার্য্যসত্য সম্পর্কে না জানার মত অবিদ্যা, অবিদ্যার উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
কোন ভিক্ষু যখন তিন প্রকারের আশ্রব যথা: কাম-আশ্রব, ভব-আশ্রব, ও অবিদ্যা-আশ্রব, এদের উৎপত্তি, নিরোধ ও নিরোধের উপায় সম্পর্কে সম্যকভাবে জ্ঞাত হয় তখন সেটাকে ‘সম্যক দৃষ্টি’ বলে।
এভাবে উপরোক্ত বিষয়াদি সম্যকভাবে জ্ঞাত হয়ে একজন ভিক্ষু প্রকৃতপক্ষে সম্যকদৃষ্টি সম্পন্ন হয়, ঋজুদৃষ্টি সম্পন্ন হয়, সে সদ্ধর্মে শ্রদ্ধা সম্পন্ন হয় এবং ধর্মে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
(মধ্যম নিকায়, সম্যকদৃষ্টি সুত্র)