বুদ্ধ শ্রাবস্থীর জেতবন বিহারে যখন বাস করছিলেন জানুসসোনি নামের এক ব্রাহ্মণ বুদ্ধকে জিজ্ঞ্যেস করেণ কিভাবে বুদ্ধের নির্দেশে যুবকগণ গৃহত্যাগ করে গভীর বনে ভীতিসঙ্কুল নির্জন পরিবেশে একটা নিরানন্দ জীবন যাপন করতে উৎসাহী হয়। উত্তরে বুদ্ধ বলেন সম্বোধি লাভের পূর্বে বোধিসত্ত্ব অবস্থায় তাঁর মনেও এরূপ সংশয়ের উদয় হয়েছিল। বুদ্ধ বলেন, মানুষ কায়িক, বাচনিক, ও মানসিকভাবে, অকুশল বা অপবিত্র কর্ম করে থাকলে তার মনে ভয়ের উদয় হয়। অন্যথা পরিশুদ্ধ কাজ বা জীবিকা নির্বাহ করে থাকলে তার মনে ভয়ের উদয় হয় না। এইভাবে, বুদ্ধ বলেন কিরূপ অকুশল চেতনা বিদ্যমান থাকলে মনে ভীতির উদয় হয় যেমন, লোভী বা পরধন লোলুপতা, পরশ্রীকাতরতা, অস্থীর, উদ্বিগ্ন, অশান্তচিত্ত হওয়া, সন্দেহভাজনতা, আত্মপ্রশংসায় মগ্ন হয়ে অন্যকে হীন জ্ঞান করা, ভীত-চিত্ত হওয়া, নিয়ত লাভ-সম্মান-খ্যাতি কামনা করা, পরিশ্রম-বিমুখী, হীনবীর্য্য হওয়া, বিস্মরণশীল, অমনোযোগী হওয়া, অসমাহিত বিভ্রান্তচিত্ত হওয়া, দুস্প্রাজ্ঞ, ও মূর্খ হওয়া। বুদ্ধ বলেন তিনি যখন সম্বোধি লাভের পূর্বে অরন্যে সাধনা করছিলেন তখন তিনি উপলব্ধি করেন যে তাঁর মধ্যে এই অকুশলগুলো বিদ্যমান ছিল না। বরঞ্চ তিনি ছিলেন নির্লোভ, মৈত্রীচিত্ত, উপশান্ত, সংশয়হীন, হীনমন্যতাবিহীন, নির্ভীক, স্বল্পেচ্ছুক, বীর্য্যবান, পরিপূর্ণরূপে স্মৃতিমান, সমাধিপরায়ন, এবং প্রজ্ঞাপরায়ন। তারপর তিনি আরও বলেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে ভয় বা আতঙ্কের উদ্রেক হলে সে মুহূর্তে কিরূপ চিন্তার মাধ্যমে শারীরিক মানসিকভাবে প্রশান্ত হয়ে প্রজ্ঞার সাথে তিনি সেটা প্রতিহত করতেন। ভয়কে প্রতিহত করে তিনি সমাধিস্থ হতেন এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, ও চতুর্থ ধ্যান সমূহ উপলব্ধি করতেন। এইভাবে চিত্ত ক্লেশবর্জিত, পরিশুদ্ধ, উজ্জ্বল, হয়ে সম্বোধির পথে অগ্রসর হয় অবিদ্যা সমূলে বিনাশ হয়। এই সূত্রে বুদ্ধ পুর্বজন্মের স্মৃতি জ্ঞান, দিব্যচক্ষু, এবং আসবক্ষয় জ্ঞান, এই ত্রিবিদ্যা সম্পর্কেও উল্লেখ করেন।
তারপর, ব্রাহ্মণকে, উদ্দেশ্য করে বুদ্ধ বলেন, ব্রহ্মন, তোমার হয়তো মনে হতে পারে যে ভগবান গৌতম বোধ হয় এখনও রাগ, দ্বেষ, মোহাদি আসব থেকে মুক্ত হয়নি যেকারণে তিনি এখনো গভীর অরণ্যে গিয়ে ধ্যান অনুশীলন করেন। কিন্তু ব্রহ্মন এইখানে আমি দ্বিবিধ উপকার প্রত্যক্ষ করেই ধ্যানাশীনুলন করি। প্রথমত, আমি এখানে নিজে বাস করবার জন্য একটা মনোজ্ঞ পরিবেশ দেখতে পাই, দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতের প্রজন্মের প্রতি করুণা পরবশ হয়ে।